Sunday, February 19, 2023

বরফমানব

 

রিসাদুল ইসলাম রিয়াদ তার কলেজের টপার একজন ছাত্র। শিক্ষক শিক্ষিকা রা তাকে নিয়ে অনেক গর্বিত। পড়ালেখার পাশাপাশি অনেক সুদর্শন সে। বন্ধুর পাশাপাশি তার অনেক শত্রুও আছে। তবে কেউই জোভান কে টক্কর দিতে পারবেনা। রিয়াদ যদি ফার্স্ট হয়ে, তবে সে হয়ে সেকেন্ড। সবাই রিয়াদ কেই পছন্দ করে। এইটাই তার একদম সহ্য হয়না।

রিয়াদ আবার ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করে। সেই বছর সে উইন্টার ভ্যাকেশনে বন্ধুদের সাথে কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘুরতে গেল। লক্ষ্য তাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা বেস ক্যাম্প ট্রেক পাড়ি দেওয়া। নেপালে পৌছানোর পরেরদিন একদম ভোরবেলা তারা তাদের যাত্রা শুরু করলো। সূর্য তখনো উঠেনি। প্রথম দিকে মোটামুটি সমতল ভুমি। একটি পাহাড়ি নদী বয়ে চলেছে। সবার মাথায় একটা করে ফ্ল্যাশলাইট লাগানো। সেই আলোয় পথ চলছে তারা। অনেক্ক্ষণ হাঁটার পরে সূর্য আস্তে আস্তে বরফ ঢাকা পর্বতের পাশ থেকে উঁকি দিতে শুরু করলো। চারপাশটা ফর্সা হতে শুরু করলো। নদীর তীরে একটা জায়গায় এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিল। বিশ্রাম নিয়ে আবার চলতে শুরু করলো তারা। এইবার তারা একটানে দুপুর পর্যন্ত ট্র্যাকিং করলো। ট্র্যাকিং করতে করতে আরো দক্ষিণে চলে গেল তারা। সূর্য এখন মাথার উপর চলে এসেছে। সেই আলো পর্বতের শিখরে ঠিকরে পড়ে মুক্তোর মতো জলজল করছে। সারাদিন ট্র্যাকিং করে ক্লান্ত হয়ে গেল তারা। সেদিনকার মতো তারা একটা জায়গায় এসে তাঁবু গাড়ল। চারপাশে জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। জঙ্গলের পাশ দিয়ে পাহাড়ি নদী বয়ে চলেছে। ক্যাম্পফায়ারের আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে ঘিরে বসলো। রিয়াদ কিছুক্ষণ বসে থাকতে থাকতে ঘুম চলে আসল তার। তাঁবুর দিকে আগাতে আগাতে কি মনে করে জঙ্গলের দিকে একবার তাকালো সে। মনে হচ্ছে যেন কেউ একজন ডাকছে তাকে। আর সে উপেক্ষা করতে পারছেনা। পা বাড়ালো সে জঙ্গলের দিকে। হাটতে হাটতে একদম মাঝখানে চলে আসল। নিচে তাকিয়ে দেখলো একটা ঘাই। একটা শীতল হাওয়া তার শরীর ছুয়ে গেল। হঠাৎ করেই অসাবধানতা বশত পা পিছলে নিচে পড়তে শুরু করলো সে। পড়তে পড়তে একটা জলাশয়ে পড়ল সে। প্রচন্ড রকমের ঠান্ডা পানি কাঁটার মতো বিধতে শুরু করলো তার শরীরে। চোখে আলো সয়ে এলে সে দেখতে পেল একটি পাহাড়ি সুড়ংগের জলাশয়ে পড়েছে সে। মাথার উপরে তারা জলজলে আকাশ। আবার কন্ঠটা শুনতে পেল। সাঁতার কেটে তীরে উঠলো সে। চারপাশে আরো একবার ভালো করে তাকালো সে। অস্বাভাবিক রকমের গরম এখানে। আর আছে স্বচ্ছ প্রাকৃতিক দেয়াল।  একপাশের দেয়াল দেখে অন্যসব দেয়াল থেকে একটু অন্যরকম লাগলো। এগিয়ে গিয়ে দেখে যে দেয়ালে অনেকগুলো ফাটল ধরে আছে। একবার হাত বুলিয়ে নিল সে। ঘটাং করে একটা জায়গায় তার আঙুল আটকে গেল। আউচ করে একটা শব্দ করলো সে। তাকিয়ে দেখে যে আঙুল থেকে এক ফোঁটা রক্ত গরিয়ে পড়ছে। দেয়াল থেকে বরফের টুকরো ভেঙে ভেঙে পড়ছে। দেখতে দেখতে  পুরো দেয়ালটাই তার সামনে ভেঙে পড়লো। চোখে আলো সয়ে এলে সে দেখতে পেল একটি বিশাল রুমের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথম দেখায় তার মনে হলো প্রাচীন কোনো রাজদরবারে দাঁড়িয়ে আছে সে। দরবারের শেষ সীমানায় অত্যুজ্জ্বল একটি আলো ঠিকরে পড়ছে। চোখ ধাঁধিয়ে গেল রিয়াদের। হেঁটে হেঁটে সে আলোটার দিকে এগুতে থাকলো। আলোর উৎসের কাছে এসে সে দেখতে পেল রাজকীয় এক বেদির উপর ষড়ভুজাকৃতির মোটামুটি বড় আকারের একটি বরফের টুকরো হাওয়ায় ভেসে আছে। ধরতে যাবে, এমন মুহূর্তে কিছু একটা উড়ে এসে তার বুকে আঘাত হানল। একদম রুমের মাঝখানে গিয়ে পড়লো সে। ভালোমতো তাকিয়ে দেখলো সে আঁধার ভেদ করে বিশাল বড়ো এক ছায়ামূর্তি সামনে অগ্রসর হচ্ছে। তাকিয়ে দেখে যে বিশাল বড়ো এক তুষারদানব। আতঙ্কে সে পিছাতে শুরু করলো। দানবের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে আরো অবাক হলো। তালুর আশেপাশে বড়ো বড়ো তুষারবল তৈরি হচ্ছে। তুষারবল একটা ছুরে মারলো দানবটা ওর দিকে। প্রচন্ড রকমের দ্রুততার সাথে সে ডাইভ দিয়ে একপাশে সরে গেল। আরো একটা ছুরে মারলো। অসীম খিপ্রতার সাথে রিয়াদ সরে গেল। এখন ষড়ভুজাকৃতি বরফের টুকরো টা আর কয়েক কদম সামনেই তার। হঠাৎ করেই সেটা আলো বিচ্ছুরণ শুরু করলো। তার কাছে মনে হলো বরফের টুকরোটা তাকে ডাকছে। তাকে ছুতে বলছে। পুরো রাজদরবার  আলোকিত হয়ে গেল। সে দৌড়িয়ে গিয়ে সেটা স্পর্শ করলো। সাথে সাথেই তার পুরো শরীর বরফ হতে শুরু করলো। বরফে আচ্ছাদিত হয়ে গেল তার পুরো শরীর। চোখ খুলে সে দেখতে পেল মাটি থেকে বেশ উপরে ভেসে আছে। আর তুষারদানবটা এক হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে তার সামনে বসে আছে।

"আমি আমার পূর্ব পুরুষ এবং আমার আগে যারা এই আইস-হার্টের দায়িত্ব পালন করেছে, তাদেরকে কথা দিলাম এই পৃথিবী কে অ্যাস্টারিয়ন ক্ল্যানের অশুভ হাত থেকে রক্ষা করবো।"

 
biz.